Thursday, 29 June 2017
চান্দিনায় প্রেমিকার আত্মহত্যা; পরিবারের দাবি প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ শেষে হত্যা
বিশেষ প্রতিবেদক:
চান্দিনায় সানজিদা আক্তার নামে এক প্রেমিকার আত্মহত্যা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রেমিকের পরিবারের অভিযোগ, মেয়ে নিজের ইচ্ছায় কীটনাশক পানে মারা গেছেন আর প্রেমিকার পরিবারের অভিযোগ, প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দুপুরে উপজেলা সদরের পৌরসভাধীন পূর্ব বেলাশহর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রেমিক শাকিল পূর্ব বেলাশহর এলাকার ইব্রাহীম মিয়ার ছেলে এবং প্রেমিকা সানজিদা ওই এলাকার মজনু মিয়ার মেয়ে। সানজিদা চান্দিনা ডা. ফিরোজা , পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
চান্দিনার পূর্ব বেশাশ্বর এলাকার শাকিল এবং সানজিদা। নিজেদের পছন্দে একে অপরকে ভালবাসেন বিয়ে করে সুখের সংসার পাতাবে বলে। তবে তাদের এই মধুময় প্রেমের সর্ম্পক মেনে নেয়নি দুই পরিবার। সর্ম্পকের বিষয়টি জানাজানি হলে ওই পরিবারদ্বয়ের মধ্যে তুমুল অশান্তি বিরাজ করছিল। এসব অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে শাকিল আর সানজিদা তাদের প্রতিবেশীর ৪ তলা ভবনের ছাদে উঠে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।তাদের কোন একজন সাথে করে ৪টি ক্যারির ট্যাবলেট (কীটনাশক ঔষধ) নিয়ে আসেন। প্রত্যেকে দুটি করে খেয়ে আত্মহত্যা করবেন, বিদায় নিবেন দুনিয়া থেকে আর ইহকালের সকল অশান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। ইহকালে একে-অপরকে না পেলেও পরজনমে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করবেন-এমন প্রত্যাশাই ছিল তাদের আত্মহত্যার প্রস্তুতির মূল কারণ।
ওইদিন বিকেলে পাশ্ববর্তী আব্দুর রব মিয়ার ৪ তলা ভবনের ছাদে উঠে আত্মহত্যার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন তারা। ঘটনাস্থলে সানজিদা ক্যারির ঔষধ খেযে ফেললেও খায়নি শাকিল। একপর্যায়ে সানজিদা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ভয়ে শাকিল ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে সানজিদার পরিবারের সহায়তায় সানজিদাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। এমনটাই জানান প্রেমিক শাকিলের পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন।
এদিকে সানজিদার পরিবারের অভিযোগ, প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে শাকিল। অভিযোগপত্রে তারা জানান, সম্প্রতি তাদের প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রেমিক শাকিল তার প্রেমিকা সানজিদাকে নিয়ে পাশ্ববর্তী আব্দুর রব মিয়ার ৪ তলা ভবনের ছাদে উঠে। সেখানে প্রলোভন দেখিয়ে প্রেম প্রণয় ঘটায় শাকিল। পরবর্তীতে ৪টি ক্যারির ট্যাবলেট (কীটনাশক ঔষধ) বের করে দুই জনকেই ঔষুধ খেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় শাকিল। প্রেমিকা সানজিদা ওই ঔষদ খেতে অস্বীকৃতি জানাইলে প্রেমিক শাকিল ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে সানজিদা ২টি ট্যাবলেট খাওয়ার পর প্রেমিক শাকিল বাকি ২টি ট্যাবলেট না খেয়ে ফেলে দেয়। সেখান থেকে সানজিদা উঠে আসার চেষ্টা করলে তাকে মারধর করে শাকিল।
প্রায় ২-৩ ঘন্টা যাবৎ মেয়েকে না দেখে বিভিন্ন স্থানে খোঁজতে শুরু করে তার পরিবার। খোঁজ নিয়ে ওই বিল্ডিং এর ছাদে উঠে নিজের মেয়েকে বিবস্ত্র অবস্থায় প্রেমিক শাকিল এর সাথে দেখতে পায় মা ফরিদা বেগম।
মাকে দেখে বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে সানজিদা। বিধিবাম! সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু ঘটে তার। আর ঘটনাস্থল থেকেই পালিয়ে যায় প্রেমিক শাকিল। ঘটনার এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন নিহত সানজিদার বাবা মজনু মিয়া।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) নাছির উদ্দিন মৃধা ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment