Sunday, 25 February 2018

চান্দিনা উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসতে চান অনেকেই । চান্দিনার বার্তা:সেয়ার করে জানিয়ে দিন

চান্দিনা উপজেলা ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি সভাপতি মো. খোরশেদ আলম এর মৃত্যুতে নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে চান্দিনা উপজেলা বিএনপি। শূন্য পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী নির্ধারণে মরিয়া হয়ে উঠেছে উপজেলা ও তৃণমূল বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। আর মরহুম খোরশেদ আলম এর স্থলাভিষিক্ত হতে কেউ প্রত্যক্ষভাবে আবার কেউ বা পরোক্ষভাবে সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ উপজেলার নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। তবে দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক সাপোর্ট যেমটা দরকার এমন নেতা কি খুঁজে পাবেন চান্দিনা উপজেলা বিএনপি? দলটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে এমন প্রশ্নের পাওয়া যায় নানা মুখী উত্তর। 
উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি কাইয়ূম খান জানান, আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। একটি বৃহৎ দলের উপজেলা সভাপতি পদটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। দল পরিচালনায় দলনেতা না হলে দলের নিয়ন্ত্রণ রাখা মোটেও সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, আমার দৃষ্টিতে ওই পদটি পরিচালনায় উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন ভূইয়া বা পৌর বিএনপি সভাপতি এবিএম সিরাজুল ইসলাম কে স্থালাভিষিক্ত করা যেতে পারে। আর দল চাইলে আমিও ওই পদটি নিতে প্রস্তুত আছি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি প্রায় অনেক বছর যাবৎ উপজেলা ছাত্রদল পরিচালনা করে আসছি। এখন ছাত্রদলে থাকার মতো বয়স আমার নেই। তাই মূল দলের দায়িত্ব নিতে চাই। যদি আনাড়ি কিংবা অগ্রহণযোগ্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমি তাদের সাথে একমত নাও হতে পারি।
উপজেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু জানান, উপজেলা বিএনপি’র দায়িত্ব নিতে হলে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে হবে। ওই পদের জন্য উপজেলার তৃণমূল থেকে মরহুম খোরশেদ আলম এর তনয় আতিকুল আলম শাওন এর নাম উঠে আসছে। আর তৃণমূল যেদিকে সমর্থন করবে আমার সমর্থনও সেদিকে থাকবে। 
উপজেলা যুবদল সভাপতি ইঞ্জি: কাজী সাখাওয়াত হোসেন জানান, রেদোয়ান আহমেদ বিএনপি ছেড়ে চলে যাওয়ায় খোরশেদ আলম, মফিজ ভূইয়া, এবিএম সিরাজ ও আমি উপজেলা বিএনপির হাল ধরি। সেই সময় সব কিছু বিবেচনা করে খোরশেদ আলমকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখন খোরশেদ আলম নেই। তার স্থানটি পূরণে কোন অনভিজ্ঞ ব্যক্তি আসুক সেটা আমি চাই না। আমি প্রায় ২৭ বছর যাবৎ পরপর সাত বার উপজেলা যুবদলের দায়িত্ব পালন করে আসছি। ২০০৮ সালে খোরশেদ আলম যখন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই সময় তার সাথে আমিও মনোনয়নপত্র নিয়েছিলাম। সেই সুবাদে উপজেলা বিএনপি সভাপতি পদে আমি নিজেই আসতে চাই। 
উপজেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক মাও. আবুল খায়ের বলেন, খোরশেদ আলম চান্দিনা উপজেলা বিএনপির পুণ:জন্মদাতা। ২০০৬ সালের রেদোয়ান আহমেদ বিএনপি ছেড়ে চলে যাওয়ায় উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের আশ্রয়স্থল ছিলেন খোরশেদ আলম। তার সঠিক নেতৃত্বে সু-সংগঠিত উপজেলা বিএনপি। খোরশেদ আলম এর মৃত্যুর পর তার ছেলে আতিকুল আলম শাওন-ই আমাদের নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উপজেলার নেতা-কর্মীদের মামলা-কারাবাসে থাকায় তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন তিনি। এছাড়া খোরশেদ আলম এর মৃত্যুর পর দলীয় কার্যালয়ে শোক সভা শেষে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের প্রতিক্রিয়ায় ২/১ জন ব্যতিত উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল নেতৃবৃন্দ শাওনকে-ই উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করার প্রস্তাব করেন। আমারও ব্যক্তিগত অভিমত শাওন কে উপজেলা বিএনপির সভাপতি করা হউক। 
চান্দিনা পৌর বিএনপি সভাপতি এবিএম সিরাজুল ইসলাম জানান, খোরশেদ আলম এর মৃত্যুতে নেতা-কর্মীদের মাঝে এখনও শোক কাটেনি। তার মৃত্যুর ৪০দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব। 
পৌর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র শাহ্ মো. আলমগীর খান জানান, দলের নীতি-নির্ধারকবৃন্দ যাকে সমর্থন করবেন আমিও তাকে মেনে নিব। এছাড়া দল যদি আমার উপর দায়িত্ব দেন আমি তাও গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছি। 
চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আরশাদ জানান, খোরশেদ আলম এর মৃত্যুর পর দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সেই সভায় দলের খোরশেদ আলম এর একমাত্র তণয় আতিকুল আলম শাওন এর নামে উঠে এসেছে। খোরশেদ আলম এর মৃত্যুর ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর হয়তো তাকেই সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করা হবে। 
তবে আতিকুল আলম শাওন জানান, আমার পিতা উপজেলা পর্যায়ের যাদেরকে অভিভাবক মেনে রাজনীতি পরিচালনা করেছিলেন তারা শুধুমাত্র আমাদের রাজনৈতিক নেতাই নন, তারা আমাদের পরিবারের অভিভাবকও বটে। আমাদের অভিভাবকরা যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেই সিদ্ধান্তেই সহমত পোষন করবো। 
ওই পদের জন্য কারও নাম প্রস্তাব হয়েছে কি-না? এমন প্রশ্নে উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন ভূইয়া জানান, পদটি পূরণে এখনও চূড়ান্ত আলোচনা করা হয়নি। তবে কারও কারও কাছ থেকে আতিকুল আলম শাওন এর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার অনেকে শাওন এর বয়স কম বলে মন্তব্য করছেন। 
কত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, যেহেতু সভাপতির পদটি শূণ্য সেহেতু সিনিয়র সহ-সভাপতি পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খলিলুর রহমান এখনও কোন আলোচনার সিদ্ধান্ত দেননি। 
এব্যাপারে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খলিলুর রহমান জানান, একদিকে খোরশেদ আলমের মৃত্যুর শোক কাটেনি অপরদিকে রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমায় অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছে এবং আবার অনেকে আত্মগোপনে। তাই পদটি পূরণের লক্ষ্যে সভা আহবান করার কোন সুযোগ-সুবিধা হয়নি। কিছু কিছু অনানুষ্ঠনিক আলোচনায় ধারণা করা হচ্ছে সভাপতি পদে আতিকুল আলম শাওন এর নামই বেশি প্রধান্য দিবেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী খোরশেদ আলম এর স্থলাভিষিক্ত করতে তার একমাত্র তনয়কে সমর্থন করলেও পদ পদবীতে থাকা বেশ কয়েক জন নেতা সেটা মেনে নিতে পারছেন না।

No comments:

Post a Comment