Friday, 4 August 2017

কুমিল্লা আওয়ামী লীগে প্রতিহিংসার শিকার যারা !।চান্দিনার বার্তা:সেয়ার করে জানিয়ে দিন

বিশেষ প্রতিনিধি ঃ  কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে প্রথম কয়েক দিনে হতবম্ব হয়ে কেউ কিছু না বললেও এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন । এ কমিটি কে অনেকে থানা কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । কুমিল্লা এখন বিভাগীয় শহর হতে যাচ্ছে কিন্তু এ কমিটির এক-তৃতীয়াংশেরই মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নাই ।

সভাপতি হিসেবে সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে মেনে নিলে ও সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আরফানুল হক রিফাত কে নিয়ে রাজপথে পোড় খাওয়া অধিকাংশ নেতা-কর্মীই ক্ষুব্ধ ।ঘোষিত কমিটির সভাপতি – সাধারন সম্পাদকের বাসা ১শ গজের মধ্যে । রিফাত বাহার গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড ।
  সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আন্জুম সুলতানা সীমাই সবচেয়ে যোগ্য , যিনি তার ব্যক্তি যোগ্যতায় শুধু কুমিল্লাই নয় সারা দেশের আওয়ামী কর্মীদের মন জয় করেছেন ! কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী বাহার ও পরিকল্পনা মন্ত্রী লোটাস কামালে অসহযোগীতার জন্য আন্জুম সুলতানা সীমা পরাজিত হন । নির্বাচন পরিবর্তি সময়ে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে তাদের অসহযোগীতার বিষয়টি উঠে আসে এবং দল তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলে পরবর্তীতে তিরস্কারের বদলে পুরস্কার দিয়ে হাজী বাহাউদ্দিন বাহারকে সভাপতি ও আরফানুল হক রিফাতকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি করা হয় । প্রথমে সীমাকে সিনিয়র সভাপতি করার কথা থাকলেও পরে ২নং সহ-সভাপতি করা হয় ।
২০০১ সালে দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ঘড়ি প্রতিকে সাংসদ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ বহিষ্কৃত হয়েছিলেন হাজী বাহার , এরপর দীর্ঘ সময় দলের রাজনীতির বাহিরে থাকেন তিনি ও তার গ্রুপের সিংহভাগ নেতাকর্মী । ২০০৮ সালে আফজল  খান ছাড় দিলে বাহার নৌকা প্রতিক পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন ।  কুমিল্লার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ভাই বা গ্রুপ বলয়ের বাহিরে আসতে পারেনি এবারও ।
দলীয় কাঠামোর অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষনার পর তাদের মাধ্যমে তৃনমুল থেকে পাঠানো নাম কেন্দ্র অনুমোদন দেয় কিন্তু এবার কারো সাথে কোন আলাপ-আলোচনা না করে একচেটিয়া ভাবে বাহার গ্রুপের ৬১ ও প্রতি পক্ষ যারা দীর্ঘ দিন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নির্যাতন হয়েছেন তাদের অনেককেই বাদ দিয়ে ৯ জনকে নেওয়া হয় ।
দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম তার প্রথম নির্বাচনী বক্তব্যে বলেছিলেন যারা নির্বাচনে ভাল কাজ করবে তাদের মূল্যায়ন করা হবে কিন্তু যে দু তরুন নেতা সবচেয়ে বেশী কাজ করেন ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুরউর রহমান তানিম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিকদার তাদের তেমন মূল্যায়ন না করাতে তাদের সমর্থকরা হতাশ ।
নুরউর রহমান তানিম এখন ও মূখ না খুললেও কবিরুল ইসলাম সিকদার কমিটি প্রত্যাখ্যান করছেন । সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যে আগের প্রতিটি জেলা কমিটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান নাম থাকলে এবার তাঁর নাম নেই । কুমিল্লা আওয়ামী লীগের জীবন্ত কিংবদন্তী যিনি আইয়ুব খাঁনকে বাধা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুবই প্রিয় জনে পরিনত হয়েছিলেন, স্বৈরাচারী এরশাদকে কুমিল্লা জনসভা করতে দেননি , যিনি ফ্রিডম পাটির হামলা প্রতিহত করে পাল্টা আক্রমণ করে কুমিল্লায় তাদের আস্তানা গুড়িয়ে দেন সেই আফজল খানকে সদস্য পর্যন্ত করা হয় না । জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকে সরাসরি ভোটে এই বাহার তার কাছে পরাজিত হয়েছিল ।  কুমিল্লায় আওয়ামী রাজনীতিতে তিনিই এখন সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ।
একটা সময় ছিল যখন আফজল খানকে বাদ দিয়ে কুমিল্লার রাজনীতি নিয়ে আলোচনারই সুযোগ ছিল না। সেই তিনি আজ যেন অস্তাচলের ছবি। বঙ্গবন্ধুর আদরের আফজল আওয়ামী লীগের সদস্য হয়ে মরতে পারবে না এটা মানা যায় না বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ।
কুমিল্লার ছাত্র রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তী স্বৈরাচারী এরশাদের পুলিশের বর্বর হামলায় কুমিল্লার রাজপথ যার রক্তে প্লাবিত হয়েছিল ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি , শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক , জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সফিকুল ইসলাম সিকদারের মত রাজপথের যোদ্ধা কমিটিতে নেই তা অনেকেই প্রতিহিংসার আলামত হিসেবেই দেখছেন । সাবেক সংসদ সদস্য জোবেদা খাতুন পারুল , ২০০৬ সালের বাতিল হয়ে যাওয়া নির্বাচনে সদর আসনে দলীয় নমিনেশন পাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাবুল ইসলাম মঞ্জুর নাম না থাকায় অনেকেই বিস্মৃত হয়েছেন ।
৭৫ পরবর্তী সময়ে যিনি বৃহত্তর কুমিল্লায় শ্রমিক লীগ কে সংগঠিত করতে নিরলস শ্রম দেন , সাবেক আইন মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু যখন কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব ছিলেন তখন শ্রমিক লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ভ্যানগার্ডের মত কাজ করছেন , জোট সরকারের রোষানলে পড়ে যিনি ৭ বছর চাকুরীচ্যুত ছিলেন জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি মনির হোসেন ঝান্টুর নাম না আসায় শ্রমিক সমাজ কে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে শ্রমিক নেতারা মনে করেন । কিংবদন্তী ছাত্রনেতা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি মিজানুর রহমান আজাদ , কুমিল্লার সম্ভবনাময় যুবনেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য , এফ বি সি সি আইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খাঁন ইমরান ও প্রতিহিংসা শিকার বলে জানা যায় ।
চাকসুর সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভিপি তারেকুল হক ,জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য তোফা খাদেম মোঃ ফিরোজ ,শহর যুবলীগের সাবেক সাহসী সভাপতি যিনি স্বৈরাচারী এরশাদের জনসভার গেইটে আগুন দিয়েছিলেন অভিজিত রায় পার্থর মত নেতাকেও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে ।
আপনি যদি আশির দশক থেকে প্রতিটি দলীয় কার্যক্রমের ছবি খোজ করেন তাহলে যাকে প্রতিটি অনুষ্ঠানে ও আন্দোলনে দেখতে পাবেন শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তাতী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন , কুমিল্লা আওয়ামী রাজনীতিতে ভদ্রজন হিসেবে পরিচিত জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর বারী হিরু , কথায় বলে পুরান চাউল ভাতে বলে খ্যাত কাউন্সিলার সৈয়দ আবীর আহমেদ ফটো , কাউন্সিলার আফসান মিয়া , সাবেক কাউন্সিলার হিম্মত খাঁন ,ঠিকাদার ফয়জুলুল্লাহ জালু , অধ্যাপক আহসানুল কবির , শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী কাশেম , এডভোকেট আবদুর রৌফ ,নির্মল পাল, সাবেক কাউন্সিলার নাসরিন সুলতানা রুনা , সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল কবির খাঁন ছোটন , গোলাম মহিউদ্দিন শরিফ ,সাবেক ছাত্রনেতা কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনামুল হক ফারুক ,  সাবেক ছাত্রনেতা পাপন পাল ,জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ যুগ্ন আহবায়ক প্রদিপ দত্ত, ইবনে সিনা আজাদ পাপ্পানা , শহর যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক কামাল চৌধুরী , আব্দুল কাদের ভুলু, মোঃ শাহজাহান  জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি লিটন দাশ ,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পোড় খাওয়া ছাত্রনেতা দেলোয়ার হোসেন , কুমিল্লা সরকারী কালেজের সাবেক জি এস আতিকুর রহমান পিন্টু ,সাবেক ছাত্রনেতা কাজী নাহিদুল হক , আবুল হোসেন ছোটন , হুমায়ন কবির , জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক সাংগঠনিক সম্পাদক পোড় খাওয়া ছাত্রনেতা দেলোয়ার হোসেন , সাবেক ছাত্রনেতা কাজী নাহিদ , জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আ হ ম আহসান উদ্দিন টুটুল ,সাবেক ছাত্রনেতা মনির ভূইয়া , সাবেক ছাত্রনেতা কুমিল্লা আইন কলেজের সাবেক জি এস আবদুস সামাদ মহান , সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট আশিকুর রহমান ভূইয়া , যাদের অন্তর্ভুক্তি হলে দল আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হতো । এদের মধ্যে ৩০ জনের নাম কেন্দ্রীয় দফতরে পাঠানো হয়েছে ।

No comments:

Post a Comment